Header Ads

vidyasagar birthplace birsingha village । গ্রামের নাম বীরসিংহ

"বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে "

"যে ভাষায় আমের নাম হিমসাগর। আর গ্রামের নাম বীরসিংহ, ফুলের নাম অপরাজিতা আর দুলের নাম ঝুমকো।" বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার যথার্থ শিল্পী। বাংলা সাহিত্যের চরম দুর্দিনে, বিদ্যাসাগর অনুভব করেন, বাংলা ভাষার বিস্তারে প্রয়ােজন বাংলাগ্রন্থের। বাংলা গদ্যকে সমৃদ্ধশালী করবার জন্য তাই তিনি রচনা করেন একাধিক মৌলিক গ্রন্থ, একই সঙ্গে নানা কালজয়ী গ্রন্থের বাংলা অনুবাদও করেছিলেন। তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ গুলি হল – ‘বেতালপঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’ , ‘সীতার বনবাস’ ।



মাইলস্টোন (Milestone) বা 'মাইলফলক' তাঁর জীবনের স্মরণীয় এক অধ্যায়। আর, সেই অধ্যায় 'ইতিহাস' রূপে আজও অক্ষয় হয়ে আছে বাঙালির জীবনে! তিনি, বীরসিংহের (তথা, মেদিনীপুরের) 'সিংহশিশু' ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিঠে চড়ে বীরসিংহ গ্রাম থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে 'মাইলস্টোন' দেখেই শিখেছিলেন ইংরেজি সংখ্যা।


সেই বীরসিংহ গ্রামের কথা আজ বলবো - 


পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে। গ্রামটির নাম আমরা সকলেই অল্পবিস্তর বইয়ের পাতায় দেখেছি হয়ত। সেই গ্রামেই আজ থেকে দুশো বছর আগে জন্ম নিয়েছিলেন এক দেবশিশু। যার কল্যানেই এই গ্রাম আজ সবার কাছে পরিচিত। বীরসিংহ |শান্ত, নিরিবিলি সবুজ ঢাকা আর পাঁচটা গ্রামের মতোই |

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়ার শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামে ১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় জন্মগ্রহণ করেন। সেই পৈতৃক ভিটে পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর মহাশয় সংস্কার করে মাটির দোতালা বাড়িও নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু ১৮৬৯ সালের মার্চ মাসে বিধ্বংসী আগুনের গ্রাসে বাড়িটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। আর তার কয়েকদিনের মধ্যেই পারিবারিক বিবাদের কারণে তিনি চিরতরে বীরসিংহ পরিত্যাগ করেছিলেন।


গ্রামে প্রবেশ করে কিছুদূর এগোলেই চোখে পড়বে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্মৃতিতে বানানো একটি লাইব্রেরী। সেই লাইব্রেরীর পাশের বাঁ দিকের রাস্তাটি অনুসরন করে কিছুদূর হেঁটে গেলেই পোঁছানো যাবে তার জন্মভিটের সামনে। তার এই বাড়িটি ১৯৩৭ সালে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির উদ্যোগে পুনরায় নির্মাণ করা হয়। বাড়িটিতে ঢোকার আগেই বাইরের পাঁচিলে চোখে পড়বে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কিছু অমূল্য উক্তি।




গেট দিয়ে ঢুকেই চারিদিকে সবুজ গাছগাছালি মন ভরিয়ে দেবে। ভিতরে মূলত তিনটি একতলা বাড়ি আছে। বামদিকের ঘরটিতে সামনেই রয়েছে মা ভগবতী দেবীর কোলে বালক ঈশ্বরচন্দ্রের এক সুন্দর মূর্তি। এছাড়া এই ঘরটিতে আছে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পড়াশুনার এবং কর্মজীবনের অনেক certificates এবং অনেক অমূল্য photographs. সোজা একটি মূখ্য ঘর আছে যার বাইরে সাজানো আছে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনকালের বিভিন্ন চিত্র। এই মুখ্য ঘরটিতে রাখা আছে তার রচিত প্রচুর পুঁথি,বইপত্র, তাঁর ব্যবহৃত সামগ্রী যেমন; স্টীল ট্রাঙ্ক, ধাতু নির্মিত পেপার ওয়েট, বইপত্র, পান্ডুলিপি, মানিব্যাগ, ভিজিটিং কার্ড ছাপানোর তাম্রফলক এমনকি তার বাঁধানো দাঁতটিও এখানে সযত্নে সংরক্ষন করা হয়েছে। ডানদিকের ঘরটির ভিতরের সংগ্রহশালায় ছোট ছোট পুতুলের দ্বারা বিদ্যাসাগরের জীবনী সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মুখ্য ঘরের সামনে বাঁধানো একটি জায়গায় বিদ্যাসাগর মহাশয় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পবিত্র এই স্থানটি তাই সুন্দর ভাবে বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে।



পথনির্দেশ :
রেল পথে কিভাবে যাবেন বীরসিংহ গ্রামে?

ট্রেনে হাওড়া থেকে পাশকুঁড়া এসে সেখান থেকে ঘাটাল গামী বাসে করে পৌঁছতে হবে বীরসিংহ মোড়। সেই মোড়ে নেমে মিনিট পাঁচেক হেঁটেই পৌঁছে যাবেন বিদ্যাসাগরের বাড়ি দেখতে।

সড়কপথে কিভাবে যাবেন বীরসিংহ গ্রামে?

গাড়িতে আসলে সোজা NH6 ধরে চলতে হবে খড়গপুর গামী পথে। মেছগ্রাম মোড় থেকে বাঁদিকে বেঁকে কিছুদূর এগোলেই বীরসিংহ গ্রাম পৌঁছানো যাবে।


কলকাতা থেকে বীরসিংহ গ্রাম পৌঁছতে সময় লাগবে 3 ঘন্টা মতো। বিদ্যাসাগরের কর্মজীবনের কথা কম বেশী আমরা সকলেই জানি। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও একাগ্রতার জন্যই আজ মেয়েদের স্বপ্নগুলো পাখা মেলে উড়তে সাহস পায়। এছাড়াও সমাজসংষ্কারেও বহু দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে গেছেন তিনি। তাই একদিনের একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে এই বীরসিংহ গ্রামে আসা যেতেই পারে।

বজ্রকঠিন বিদ্যাসাগরের হৃদয় ছিল কুসুমের মতাে কোমল। উনিশ শতকের মানবতাবাদি দীক্ষিত এই মহান শিল্পী শুধুমাত্র গ্রন্থ রচনা করেই ক্ষান্ত হননি। সমাজের বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে ছিল তাঁর দয়ার দৃষ্টি । বাল্য বিধবাদের মলিন মুখ তাকে অশ্রুসিক্ত করে তুলত। তাদের দুর্দশা মােচনের জন্য তিনি কঠোর সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন সিদ্ধ হয়। বহুবিবাহ রদেও বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। গােটা জীবন তিনি এমনই নানা সামাজিক কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে আপােষহীন সংগ্রাম করেছিলেন।



প্রয়োজনীয় তথ্যঃ-
বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দির প্রত্যহ সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং প্রতি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে।

কলকাতার নিকটবর্তী বাঙালির এই তীর্থস্থান সম্পর্কে আজও বহু বাঙালি অজ্ঞাত। এর অন্যতম প্রধান কারণ খাওয়া ও থাকার জায়গার অভাব।

for more update please help us
 




vidyasagar birthplace birsingha village


1 টি মন্তব্য:

  1. পরেশচন্দ্র জানা৪ জুলাই, ২০২২ এ ১১:২৩ AM

    আপনি এত কাছে আসলেন, যদি জানতাম একবার দেখা করতে যেতাম, আপনি সহজ সরল ভাষায় সব কিছু বলতে পারেন। আপনার কাজ সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। ভালো থাকবেন, আপনার গুনমুগ্ধ একজন ভক্ত।

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.