Header Ads

মহাদেবের প্রতি বিশ্বাস আর ভরসায় পালিত হয় চড়ক । বাবা বটেশ্বর মন্দির । charak puja 2022

charak puja 2022
চড়ক পূজা ২০২২ 
  বাবা বটেশ্বর মন্দির 
 Baba Bateswar Mandir 

 চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাড়ায় বাড়ি বাড়ি আসত গাজন সন্ন্যাসীরা। মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে গেরুয়া বসন পরা, হাতে মালসা এবং ত্রিশূল নিয়ে দোরে দোরে তারা হাঁক পাড়ত, বাবা তারকনাথের চরণে সেবা লাগে, মহাদেব। বাড়ির বড়রা সাধ্যমতো তারকনাথের চরণে সেবা চড়াতেন। যে যতটুকু পারতেন, দিতেন। ওই গাজন সন্ন্যাসীরা দিনভর উপোস করে থাকত। দিনের শেষে ভিক্ষা করে যা পেত, তা খেত। একমাস ধরে চলত তাদের এই বিশেষ ভিক্ষা। আর চৈত্র সংক্রান্তিতে হত চড়ক উৎসব। এখনও বাংলার গ্রামে গঞ্জে চড়ক উৎসব হয় বেশ আড়ম্বর করে। আগে কলকাতা শহরেরও অনেক জায়গায় চড়ক উৎসব হত। এখনও উত্তর কলকাতার কিছু কিছু জায়গায় এই উৎসব এবং চড়ক উপলক্ষ্যে মেলা হয়। তবে এখন আর শহরে গাজন সন্ন্যাসীদের দেখা মেলে না। তবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে এখনও তাদের দেখতে পাওয়া যায়। 

চড়ক পূজা কি ভাবে শুরু হয় ? 


 চড়ক পূজার শুরুতে শিবপাঁচালী পাঠক মন্ত্রপড়া শুরু করলে সন্ন্যাসীরা শিবধ্বনি দিতে দিতে নদীতে স্নান করতে যান। স্নান শেষ করে মাটির কলসি ভরে জল আনেন তারা। এরপর চড়ক গাছের গোড়ায় গোল হয়ে দাঁড়ান সন্ন্যাসীরা। আবার শিবপাঁচালী পাঠ করতে থাকেন বালা (শিবপাঁচালী পাঠক)। সন্ন্যাসীরা চড়ক গাছে জল ঢেলে প্রমাম করে চলে যান ফাঁকা জায়গায়। সেখানেই তাদের বাণবিদ্ধ করা হয়। সন্ন্যাসীরা নিজের শরীর বড়শিতে বিঁধে চড়কগাছে ঝুলে শূণ্যে ঘুরতে থাকেন। আবার সন্ন্যাসীর আর্শীবাদ লাভের আশায় শিশু সন্তানদের শূন্যে তুলে দেন অভিভাবকরা। 

সন্ন্যাসীরা ঘুরতে ঘুরতে কখনও কখনও শিশুদের মাথায় হাত দিয়ে আর্শীবাদ ও করেন। এ অবস্থায় একহাতে বেতের তৈরি বিশেষ লাঠি ঘুরাতে থাকেন আর অন্য হাতে দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে বাতাসা ছেটান এই ঝুলন্ত সন্ন্যাসীরা। তাদের বিশ্বাস জগতে যারা শিব ঠাকুরের সন্তুষ্টি লাভের জন্য স্বেচ্ছায় এত কঠিন আরাধনার পথ বেছে নিয়েছেন বিনিময়ে পরলোকে শিবঠাকুর তাদের স্বর্গে যাওয়ার বর দেবেন। ফাল্গুন মাসে বসন্ত উৎসব চলে যাওয়ার পরপরই শুরু হয় বাংলা নববর্ষকে আগমন জানানোর পালা।

 আর এই নববর্ষকে যে সকল উৎসবের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয়, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গাজন উৎসব। প্রাচীন বাংলার লোককথার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে এই গাজন বা চড়ক উৎসবের কাহিনী। চৈত্র মাস জুড়ে চলে এই উৎসব। আর মাসের শেষ কদিনে বসে চড়কের মেলা। উৎসব বা মেলায় যে সমস্ত খেলার প্রদর্শন করা হয়, তার মধ্যে বেশ কিছু খেলা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও বেদনাদায়কও বটে। বলা হয়, একটি শিশুর জন্ম দেওয়ার সময় একজন মা যে প্রসব যন্ত্রণা অনুভব করেন, সেই যন্ত্রণা পেতে এই ধরনের ভয়ঙ্কর খেলায় মাতে কিছু মানুষ। তারা মনে করে, মহাদেব তাদের যন্ত্রণার উপশম করবেন। অনেকে বলেন, এই গাজন উৎসবের সঙ্গে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পুনরায় হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। মধ্যযুগে যখন ভারতবর্ষে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বৌদ্ধ ধর্ম, সেই সময় এই দেশের বিভিন্ন স্থানে শরণার্থী হিসেবে থাকতে শুরু করেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। বাংলার কিছু জেলাতেও তাঁরা ছিলেন। ধীরে ধীরে তাঁরা আবার ধর্মান্তরিত হন। তাই এই প্রত্যাবর্তনের উৎসব শিব বন্দনার উৎসবে পরিণত হলেও, বৌদ্ধ ধর্মের কিছু তান্ত্রিক প্রক্রিয়া এখনও এই উৎসবের সময় পালন হতে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন মড়ার খুলি হাতে নিয়ে নৃত্য, শরীরের ভিতরে লোহার শিক ঢোকানো, জিভের মধ্যে ধারালো ফলা ঢুকিয়ে আগুনের মধ্যে লাফানোর মতো বিপজ্জনক খেলা দেখানো হয়।
 

পৌরাণিক গল্পে গাজন উৎসব কিভাবে হয় ?


 লোকমুখে শোনা যায়, এই উৎসব প্রথমে ধর্মরাজের গাজন হিসেবে পরিচিত ছিল। সেটা ছিল বৌদ্ধদের উৎসব। পরবর্তীকালে তা হয়ে উঠেছে শিবের গাজন। এই গাজন উৎসবের আয়োজন প্রধানত গ্রামে বা মহল্লায় শিবের মন্দিরের মধ্যে কিংবা তার সামনে করা হয়। মেলা ও পুজো দেখতে দূর দূর গ্রাম থেকে বহু মানুষ আসে। লিঙ্গপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিবারাধনা প্রসঙ্গে নৃত্যগীতাদি উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পূজার উল্লেখ নেই। পূর্ণ পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত গোবিন্দানন্দের বর্ষক্রিয়াকৌমুদী ও রঘুনন্দনের তিথিতত্ত্বেও এ পূজার উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এ উৎসব প্রচলিত ছিল। উচ্চ স্তরের লোকদের মধ্যে এ অনুষ্ঠানের প্রচলন খুব প্রাচীন নয়।

 জনশ্রতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন। গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়কপূজারই রকমফের। চড়ক পূজা চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিবসে পালিত হয়। এ পূজার বিশেষ অঙ্গের নাম নীলপূজা। পূজার আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ বা সিঁদুরমথিত লম্বা কাঠের তক্তা ('শিবের পাটা') রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে "বুড়োশিব" নামে পরিচিত। পতিত ব্রাহ্মণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। 

পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারনো বা হাজরা পূজা করা। কথিত আছে, এই দিনে শিব-উপাসক বাণরাজা দ্বারকাধীশ কৃষ্ণের সংগে যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মহাদেবের প্রীতি উৎপাদন করে অমরত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষায় ভক্তিসূচক নৃত্যগীতাদি ও নিজ গাত্ররক্ত দ্বারা শিবকে তুষ্ট করে অভীষ্ট সিদ্ধ করেন। সেই স্মৃতিতে শৈব সম্প্রদায় এই দিনে শিবপ্রীতির জন্য উৎসব করে থাকেন। এই গাজন উৎসবের সময়েই নীল পুজোরও আয়োজন করা হয়। এখানে বাবা বটেশ্বর মন্দির -এর মন্দিরের ভিডিও রইলো - দেখতে পারেন -- প্রথম পর্ব  
দ্বিতীয় পর্ব
   
তৃতীয় পর্ব
  



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.