Mogolmari an archaeological site । মোগলমারি বৌদ্ধবিহার । মোগোলমারি বৌদ্ধবিহার
মোগলমারি বৌদ্ধবিহার
কিভাবে যাবেন মোগলমারি ?
কলকাতা থেকে সড়ক পথে অতি সহজেই পৌঁছান যায় মোগলমারি। বিদ্যাসাগর সেতু থেকে মোগলমারির দূরত্ব প্রায় ১৬৩ কি.মি.। সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক। বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে প্রবেশ করতে হবে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। কোনা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বামদিকে মোড় নিয়ে ৬ নং জাতীয় সড়কে প্রবেশ করতে হবে। যাত্রাপথে ধূলাগড়ি, উলুবেড়িয়া, কোলাঘাট, দেউলিয়া, মেছোগ্রাম, ডেবরা পার হয়ে কিছু দূর অতিক্রম করার পর মাদপুরের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক দু-ভাগে বিভক্ত হয়েছে। প্রথমটি উড়ালপুলের উপর দিয়ে খড়্গপুর হয়ে মুম্বাইয়ের দিকে গিয়েছে। অন্যটি বাঁদিকে বেঁকে গিয়ে ৬০নম্বর জাতীয় সড়ক বা এশিয়ান হাইওয়ে ৪৫-এ গিয়ে মিশেছে। এই পথ ধরে ৫২ কিলোমিটার অতিক্রম করলেই পৌঁছানো যাবে মোগলমারি বাসস্ট্যান্ড।
কলকাতা থেকে সড়কপথে মোগলমারি যেতে হলে ধর্মতলা থেকে বাস ধরে খড়গপুর (১৬৩ কি.মি.) পৌছেও মোগলমারি যেতে পারেন।
বাসস্ট্যান্ড থেকে ডানদিকে একটি রাস্তা মোগলমারি গ্রামে প্রবেশ করেছে। সেই রাস্তা ধরে মাত্র ৪০০ মিটার এগোলেই মোগলমারি বৌদ্ধ মহাবিহার।
মোগলমারি বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০টাকা দিয়ে বাস ধরে ১৫-২০ মিনিটে (১২.০৭ কি.মি.) চলে আসুন বেলদা কেশিয়ারি মোর। সেখান থেকে ১০ টাকা ভারা দিয়ে বাসে করে (১২ কি.মি.) চলে আসুন কুকাই । কুকাই থেকে টোটো ধরে (১০ টাকা ভারা) ১৫ মিনিটে পৌছেযাবেন (৩ কি.মি.) কুরুম্বেরা দূর্গের গেটে।
রেল পথে মোগলমারি কিভাবে যাবেন ?
হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনেও পৌঁছানো যাবে মোগলমারিতে। খড়গপুর এবং বেলদা দুটো স্টেশনে নেমেই পৌছানো যাবে মোগলমারি।
হাওড়া স্টেশনের ২১ নং প্লাটফর্ম থেকে সকাল ৬.০০টায় ছাড়ে (ট্রেন নং ১২৮২১) হাওড়া পুরী ধৌলি এক্সপ্রেস, যা (১১৮ কি.মি) খড়গপুর পৌছায় সকাল ৭.৪০ এবং বেলদা পৌছায় সকাল ৮.১৫।
খড়গপুর স্টেশন থেকে বেড়িয়ে বাসস্ট্যান্ড থেকে দাঁতনগামী নিত্য যাতায়াতের বাসে চেপে (ভাড়া ৪০ টাকা) /(অথবা গাড়ি ভাড়া করে, ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা) ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটে (৭০ কি.মি.) পৌছানো যাবে মোগলমারি প্রন্তস্থলে।
অথবা বেলদা স্টেশন থেকে বেড়িয়ে বাসস্ট্যান্ড থেকে নিত্য যাতায়াতের বাসে করে (বা গাড়ি ভাড়া করে) ১০ কিলোমিটার রাস্তা (ভাড়া ২০ টাকা) অতিক্রম করে অতি সহজেই পৌঁছান যাবে মোগলমারি প্রত্নস্থলে।
একই দিনে ফিরতে চাইলে ঠিক বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে (ট্রেন নম্বর ১২৮২২) ধৌলি এক্সপ্রেসে চাপলেই রাত্রি ৮টা ১৫ মিনিটে হাওড়া স্টেশন। (যখন যাত্রা করবেন তখন অবশ্যই সময় দেখে নেবেন, নতুন রেল- সময় সরণী থেকে )
** লোকাল ট্রেনে হাওড়া থেকে খড়্গপুর, খড়্গপুর থেকে ওড়িশাগামী ট্রেনগুলিতে চেপে নামতে হবে
দাঁতনের আগে নেকুড়সেনী স্টেশনে। নেকুড়সেনী থেকে মোগলমারির দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। নেকুড়সেনী থেকে যাতায়াতের একটু অসুবিধা আছে। সময়মতো টোটো মেলে না। ভাড়াও একটু বেশি।
ইতিহাসে মোগোলমারী কিভাবে এল ?
২০০৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রী অশোক দত্ত এবং তাঁর টিম মোগোলমারী গ্রামে খননকার্য চালিয়ে এই হারিয়ে যাওয়া বিশাল বৌদ্ধবিহারটি পুনরুদ্ধার করেন। তার আগে জায়গাটি স্থানীয় ভাষায় "সখিসেনের ঢিবি" নামে পরিচিত ছিল। আনুমানিক ৬ থেকে ১২ শতকের মধ্যে নির্মিত হয় এই বৌদ্ধবিহার। প্রাচীনকালে এই জায়গাটি "দন্তপুর মহাবিহার" বা "শ্রীভান্ডক মহাবিহার" নামে প্রসিদ্ধ ছিল। মনে করা হয় সেই সময় বাংলার অন্যতম বড় বৌদ্ধবিহার ছিল এটি। জায়গাটির বর্ণনা বিখ্যাত পরিব্রাজক ফা হিয়েন এবং পরবর্তী কালে হিউয়েন সাং এর রচনাতেও পাওয়া গিয়েছে! মূল এক্সক্যাভেশন সাইটে দেখতে পাবেন বৌদ্ধ দেব দেবীদের মূর্তি, বিভিন্ন কক্ষের ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি। এখানে একটি মিউজিয়াম আছে যেখানে আরও অনেক বহুমূল্য সামগ্রী দেখতে পাওয়া যায়। মোগলমারি থেকে ১২টি বৌদ্ধ মূর্তি খননকালে পাওয়া গেছে। মূর্তিগুলির মধ্যে তিনটির নাম জানতে পারা গিয়েছে ১) হিন্দু দেবী সরস্বতী রূপে মূর্তির হাতে একটি বাদ্যযন্ত্র এবং সাপের দ্বারা আবৃত নাম 'জঙ্গুলি'। ২) পদ্মফুল হাতে বাসা অবস্থানে মূর্তির নাম অবলোকিটেশ্বর। ৩) পুস্পমালা পরিহিত মূর্তি 'লোকেশ্বর'। বর্তমানে মোগোলমারি বৌদ্ধবিহারের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব A.S.I এর।
একনজরে মোগলমারি ---
১) পুরাতাত্ত্বিকদের মতে, মোগলমারি পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধবিহার। নালন্দার সমসাময়িক।
২) কথিত আছে মোগলরা একসময় এই পথ মাড়িয়ে যেতো, তাই এই জায়গার নাম মোগলমারি।
৩) কথিত আছে মোগলমারি বৌদ্ধবিহারে ছিল বুদ্ধদেবের দাঁত।
৪) চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে এখানে এসেছিলেন, তিনি তার ‘সি-ইউ-কি’ভ্রমণ বৃত্তান্তে উল্লেখ করেছেন এই বৌদ্ধবিহারের কথা।
৫) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর ৭ মার্চ ২০১৩ মোগলমারি ‘সখীসেনা ঢিবি’-কে রাজ্য সংরক্ষিত সৌধের মর্যাদা প্রদান করে।
৬) বর্তমানে মোগলমারি বৌদ্ধ বিহার পঃ বঃ সরকারের ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।
আমার মতামত সব দেখে -
অনেক বছর আগে সামনে এসেছে মোগলমারি| কিন্তু তাকে নিয়ে খুব একটা আগ্রহ স্থানীয়দের মধ্যে দেখলাম না| অবশ্য আমি ভুলও হতে পারি | কারণ আমি গিয়েছিলাম সপ্তাহের মাঝে ভরদুপুরে | সংস্কারের কাজ চলছে পুরোদমে | নিজেই ঘুরে দেখলাম| একটি লাইব্রেরি রয়েছে| যে জিনিসগুলো সেগুলো নেই, কিন্তু তার ছবি রয়েছে একটি ঘরের মধ্যে| সেখানে গেলাম| এতদিন এখানে কোন পাঁচিল ছিল না| সেই কাজও চলছে| ভাল করে ঘুরে দেখতে ৪০/৫০ মিনিটের বেশি সময় লাগে না | যারা একবার দেখতে চান কি আছে সেখানে-
তাদের জন্য আমাদের একটা ছোট ভিডিও থাকলো -
কোন মন্তব্য নেই